ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


স্বাধীনতা বলতেই মাথায় এসে যায় অনেক টুকরো টুকরো সাহসিকতার গল্প যেগুলো আজকে আমাদের ব্যস্ততার সময়ে আমরা একবার ভেবে দেখতেও আলস্য বোধ করি । এই স্বাধীনতার মধ্যে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটা প্রভাবশালী ভূমিকা ছিল যেগুলো আজকে আমাদের বর্তমানে বাঙালিদের মধ্যে অনুপস্থিত ,তবুও একটু মনে করছি কয়েকজন বিপ্লবীদের যারা ভিন্ন ভাবে দেশপ্রেম জাগিয়ে দিয়েছিলেন এই বাংলার বুকে , সত্যি বলতে পুরো ভারতবর্ষে ।

কিংসফোর্ড পূর্বে বিপ্লবীদের উপর এত অত্যাচার চালাচ্ছিলেন যে তাতে বাধ্য হয়ে বারীন ঘোষের পরিচালিত “জুগান্তর” বিপ্লবী দলের সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র চাকী (মুজাফরপুর্ হত্যাকাণ্ডে ক্ষুদিরাম বসুর অন্যতম সাথী ) মুজাফরপুর্ জেলার বিচারক লর্ড কিংসফোরডকে বোমা মারবার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেবার জন্য গিয়েছিলেন কিন্তু ভুলবশতও অন্য দুজন মহিলা সেখানে মারা যান। তারপর সে পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে পালিয়েছিলেন সমস্তিপুর , সেখানে তাঁকে আশ্রয় দেয় ত্রিগুনাচরন ঘোষ এবং ওনার সহায়তায় প্রফুল্ল চাকী পাড়ি দিচ্ছিলেন পাটনার উদ্দেশে কিন্তু স্টেশনে নন্দলাল ব্যানার্জী (সাব-ইন্সপেক্টর) সন্দেহ করে ফেলেন এবং তাঁকে ধরতে উদ্যত হতেই প্রফুল্ল চাকী গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন। শুধু যে কিংসফোর্ডকে মারার উদেশ্যই প্রফুল্ল চাকীর বিপ্লব ছিল তা নয়, শৈশবকাল কাল থেকেই তিনি ছিলেন বিদ্রোহী। স্কুলেও সে ইংরেজদের তৈরী শিকল মেনে নিতে চায়নি তাই তিনি বিতারিত হয়েছিলেন। হয়ত এভাবেই সাহস শেষ হয়ে যায়নি বরং আরও আগুনকে প্রজ্বলিত করে উঠিয়েছিল সেই সময়।
কিছুদুর এগোতেই আমরা এমন অনেক মানুষ পাবো যারা বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করে দিয়েছেন ,তাদের মধ্যে একজন হলেন অশ্বিনীকুমার দত্ততিনি  পূর্বতন বাংলার বরিশাল জেলার উচ্চ কায়স্থ ভরদ্বাজ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন (২৫ জানুয়ারী ১৮৫৬)। ১৮৭০ সনে রংপুর থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফল হয়ে তিনি পর পর নিজেকে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষায় ভূষিত করেন । হিন্দু কলেজ থেকে এফ.এ , এলাহাবাদ থেকে ওকালতি করবার পর কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে এম.এ করেছিলেন। তাঁর মনের ভেতরে দেশপ্রেমের জাগরণ পুরো মাত্রায় হয়ে ওঠে যখন ১৮৭৮ সনে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন এবং তারপর পুরো মাত্রায় প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল যখন তিনি সিরামপুরের ছাত্র নন্দালাল প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়েছিলেন, আবারো ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে ও তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন তাঁর স্বদেশী মনভাবের বহিঃপ্রকাশের জন্যই। আসলে সবকিছুই ভালভাবে স্বচ্ছভাবে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষার মত আর কিছু পরিপূরক আর কিছু হয়না । তাঁর  কাজের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ , ব্রজমোহন স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠা এবং স্বদেশ বান্ধব সমিতি ( বিদেশি সামগ্রী ত্যাগ করার পরিকল্পনা ) গঠন যার জন্য তিনি লখনউ জেলে ও গিয়েছিলেন ১৯০৮ সনে। জেল থেকে বেরিয়ে ও তিনি অহিংস বিদ্রোহের পন্থা অবলম্বন করেন বিভিন্ন দেশপ্রেমের উপর বই লিখে , সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভক্তিযোগা, কর্মযোগা, ভারতগীতি ইত্যাদি ।

কোনও প্রভাবশালী আর হিতকারী ভাবনাকে দেশ ও দশের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার মাধ্যম শুধুমাত্র শিক্ষকতা বা বিদ্রোহকারী না হয়েও যে পৌঁছে দেওয়া যায় তা চারণ কবি মুকুন্দ দাস বুঝিয়েছিলেন (২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ – ১৮ মে ১৯৩৪)ঢাকা শহরের বিক্রমপুর পরগনায় সাধারন মুদি পরিবারে। জন্ম হয় মুকুন্দ দাসের এবং গলার সুর বংশসুত্রেই পাওয়া বলা যায়। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ওনার পিতার সুন্দর গায়কির জন্যই বরিশাল কোর্টে চাকরী পাবার ব্যবস্থা করেছিলেন।
পড়াশুনা থেকে দূরে থাকা যজ্ঞেশ্বর ওরফে মুকুন্দ দাসের মন ছিল মাছ ধরা, পাখির বাসা খোঁজা আর বন্ধুদের সাথে খেলাতে । এই নিয়ে মুকুন্দের স্কুলের শিক্ষক অশ্বিনী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন যখন ছয় বছর স্কুলে পড়ার পর স্কুল ছেঁড়ে দিলেন মুকুন্দ। সেইসময় অশ্বিনী মুকুন্দের সাথে কথা বলেন এবং তাঁর অভূতপূর্ব গুণাবলীর সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে সেগুলোকে আগামীতে দেশপ্রেমের মাধ্যম হিসেবে চালিত করেছিলেন। বাংলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে (বরিশাল, ত্রিপুরা, নউখালি,ফরিদপুর) গান ,নাটকের মাধ্যমে দেশের প্রতি টান জাগাতে সক্ষম হন মুকুন্দ , তাঁর বিখ্যাত নাটক “মাতৃপূজা” তে ভারতমাতার সন্তান হিসেবে দেশবাসীর একজোট হয়ে মা কে মুক্ত করবার বার্তাই লুক্কায়িত ছিল ।তাছাড়া আরও অনেক নাটক যেমন প্রবাসী, যুগান্তর, বন্দে মাতরম, নবশক্তি রচিত করেছিলেন যেগুলো মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের পথের সাথে তাঁকে যুক্ত করেছিল সেই সময়।
  



No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098