পথিকৃৎ
১
যেদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব আমি
সেদিন আমার ওপর বিশ্বাস হারাবে এই পৃথিবী।
এই দেবালয় অতিথি করে নিল আমায়,
এ নদীর সঙ্গমে মিশে গেল সহস্র আকাঙ্খার পরিব্যাপ্ত
হাহাকার।
২
হঠাৎ যেন পানকৌড়িটা টুপ করে স্নান করে নিল একটু
ভিজবে বলে,
কখনও বা পরিযায়ী পাখিগুলো স্বরবে জানালো বিকেলের
আহ্বান; রেবানদীর ধারে পাড়ে পড়ে থাকা পাথরগুলো হয়ত সমস্বরে বলতে চাইল
"ভালো লাগছে তোমায় বন্ধু,
তোমার হাতটা ধরতে পারব বলে-
নীরব পাথর হয়ে শুয়ে আছি নদীর ধারের শুকনো
তটে", আমি তো কিছুই শুনতে পেলাম না!
ভট-ভটি নৌকার আওয়াজ বুঝি খেয়ে ফেলল সব।
৩
শান বাঁধা ঘাটে অপ্রতুল ইতিহাসের পুনঃঅবির্ভাব-
ভক্তের হাতে ফুলের সাজি, হৃদয়ে ঝলসে যাওয়া
'বসন্ত',
মনে জমায়িত অভিমান,
অমিয়রস বুঝি উপচে পড়বে পিনাকের ধার থেকে।
আরতিশেষে প্রভবেশ্বরের প্রসাদ নিতে
মলিন হাত দুটো পেতে দিলাম।
৪
কিঙ্কর করে রেখো তবে আমায়
ওহে গরবিনী, স্রোতস্বীনি -
ধুনি সাধুর আর্তডাক যুগের পর যুগ দাঁড়িয়েছে ভক্তির
প্রতীক হয়ে,
দৈবিক অনুভূতির শিকার হলাম এবার। তপোভূমিতে
বুঝি নরঘৃণ্যও সাত্ত্বিক হয়?
এখানেই যেন সব আশ্চর্য ঘটে -
ইতিহাসের বহুস্তরজয়ী তপস্বিনী,
চিরশাশ্বত রেখা - নর্মদা।
আবহমান
১
এমন কুশল বিনিময় যদি বারবার হয়
অগুনতি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় যদি
ভুলে যেতাম যদি নির্ভাগ্যের কথা
কোনো গরমিল থাকতো না এই সম্পর্কে।
তুমি জন্মেছিলে কোলোসিয়ামের গহ্বরে,
আমি জন্মেছিলাম হারিয়ে যাওয়া কালিবাঙ্গান শহরে,
কত লগ্ন গুনেছে না জানি আমাদের সেই সূর্য ঘড়ি -
সময় ।
২
অনেক কাল পেরিয়ে গেছে জানো?
অনেক ঋতু কেঁদেছে আমাদের অপেক্ষায়,
তুমি কি আজও কাঁদো?
গত পরশু দেখলাম তোমায় বিমানবন্দরে
শুনলাম তুমি কি যেন একটা ভিনদেশী ভাষায় কথা বলছ
আমার দিকে ঘুরে তাকিয়েও চিনলে না কেন আমায়?
নাকি ইতিহাস প্রাচীন আমাদের এই সম্পর্কের শ্যাওলা
তোমার মনে জমেছে?
আমি তো ওরকম নুয়ে পড়া বিকেলের আলোয় তোমায় বেশ
চিনেছিলাম। আমাদের জন্মান্তর প্রতিবার থামিয়েছে এই ক্ষণিকের মোড়ে।
৩
তোমাকে আজ ভিসা হাতে করে এদেশে ঢুকতে হয়?
জানো, তোমার দেশেও আমার এই পরিচয়।
সাধারণ দুই ভিনদেশী নাগরিক আমরা,
কিন্তু কতকালের এই বিনিময়!
তুমি জন্মেছিলে কোলোসিয়ামের গহ্বরে, আমি
জন্মেছিলাম হারিয়ে যাওয়া কালিবাঙ্গান শহরে।
হঠাৎ এক উগ্রপন্থী জাতিস্মর
মনের মধ্যে খুঁচিয়ে মারছে
আমায়।
No comments:
Post a Comment