- আশনা আনজুম
হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ
কেঁপে কেঁপে উঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে,
সে কোলাহলের রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ্যে
জলে ও মাটিতে ভাঙনের বেগ আসে।
তারুণ্যের কবি হিসেবে সুপরিচিত সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট
(১৩৩৩ বঙ্গাব্দ) কলকাতার কালিঘাটে।তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া
থানায়।তাঁর পিতা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য এবং মাতা সুনীতি দেবী।
তিনি বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে অকৃতকার্য
হন।বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী সুকান্ত এসময় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করলে তাঁর
পড়ালেখার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
তরুণ বয়সে বৈপ্লবিক চিন্তাধারার অমর সৃষ্টিকর্ম রচনার জন্য সুকান্ত বিখ্যাত।
তাঁর বৈপ্লবিক কিছু সৃষ্টির একটি অন্যতম অংশ তুলে ধরা হল-
আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ
র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
এছাড়া তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে সাধারণ মানুষের
ক্ষোভ, দুঃখ-কষ্ট,
বিষাদের প্রতিচ্ছবি।সামাজিক বৈষম্য ও অন্যায়ের দৃপ্ত প্রতিবাদ তাঁর
কবিতার উল্লেখযোগ্য দিক।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ছাড়পত্র,ঘুম নেই,পূর্বাভাস,অভিযান,হরতাল,
মিঠেছড়া ইত্যাদি।এছাড়া তিনি ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষে 'আকাল' নামক একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। তিনি
আমৃত্যু 'দৈনিক স্বাধীনতা'র কিশোরসভা অংশের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সমাজের নানা অনাচার সুকান্তকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছে।বিশেষ করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বিশ্বব্যাপী
তাণ্ডবলীলা কিশোর সুকান্তকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।তরুণ বয়সে রচিত সুকান্তের কবিতা
সমূহ পাঠকের বিস্ময়ের সুচনা করে।তাঁর কবিতার গঠন শৈলী, সাবলীলতা
ও শব্দের নৈপুণ্য সচকিত করে পাঠকমাজকে। বিশেষত নিপীড়িত মানুষের জীবন সংগ্রাম তুলে
ধরায় এ কবি সাধারণ মানুষের মনে এক অমর আসন লাভ করেছেন।
সুকান্ত ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির নিবেদিত কর্মী। এমনকি তিনি এতোটাই
নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন যে মনে করা হয় পার্টির কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে একসময় তিনি দুরারোগ্য
ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন। দুরারোগ্য ক্ষয়রোগের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)
মাত্র একুশ বছর বয়সে এ তরুণ কবি মৃত্যুবরণ করেন।
No comments:
Post a Comment