"তিনি ওপর থেকে নেমে আসেননি,
তিনি যেন ভারতের কোটি
কোটি মানুষের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন..."
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নামের চেনা লোকটির সম্পর্কে এমন সহজ সত্যি কথা
বলেছিলেন, জওহরলাল
নেহেরু।যিনি ব্যাক্তিগতভাবে ব্যাপক শিল্পায়ন, সমাজতান্ত্রিক
আদর্শ ও তারুণ্যের দীপ্তিতে বেশি আস্থা পোষণ করতেন,গান্ধীর 'হিন্দ স্বরাজ' এর আপাত 'অবাস্তব'
ও 'প্রাচীনপন্থী' চিন্তার
চেয়ে।ভারতের কোটি কোটি মানুষের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেই এই জনৈক এম.কে.গান্ধী হয়ে
উঠলেন কালক্রমে, মহাত্মা।জাতির জনক।স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন
আসে, জন্মের দেড়শো বছর পরেও আজকের এই ২০১৮ এর ডিজিটাল
ইন্ডিয়ায় গান্ধী ও তাঁর আদর্শ কতটা প্রাসঙ্গিক?বা আদৌ
প্রাসঙ্গিক কি না?
মহাত্মার মতো আপাত বিরোধী বহুবর্ণচরিত্রের সহাবস্থান খুব কম লোকের মধ্যেই
লক্ষ্য করা যায়।অহিংসার সাথে অপ্রতিরোধ্যতার, প্রতিক্রিয়াশীলতার সাথে প্রত্যয়ের, দীপ্যমান তরুণ প্রজন্মের টাটকা হাওয়ার সাথে অভিজ্ঞ আঞ্চলিক প্রবীন
নেতৃবৃন্দের ভরসার,বনিকশিল্পপতি শ্রেণীস্বার্থের মুখপত্রের
সাথে শ্রমিক হরিজনদের মসীহার, এলিটের স্বপ্নের সাথে জনগণের
আশার, - কর্মজীবন ও যাপনে এধরণের হাজারো বিস্ময়কর সহাবস্থান
এই গান্ধি চরিত্রেই উপস্থিত।কিন্তু তবুও তাঁর আপাত অবাস্তব অহিংসার দর্শনই হয়ে
উঠলো যথার্থ গণমূখী জাতীয়সংগ্রামের প্রধাণ দিশা। ডুয়ার্সে, গ্রামে,
উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায়- 'গানহি বাবা' হয়ে উঠলেন মসীহা।অকপট হরিজন ও প্রান্তিক মানুষেরা বিশ্বাস করলেন, গান্ধি টুপি মাথায় নিলে,গুলি গায়ে লাগে না।নরকের
দ্বার না হয়ে, নারী হয়ে উঠলেন সংগ্রামের অঙ্গ, বৃদ্ধা শহীদ হয়ে উঠলেন 'গান্ধীবুড়ি'।এ কি কেবলই ক্যারিশ্মা? যদি তাই হয়, তবে সেই জাদুমন্ত্রের উচ্চারণ কেমন? কীভাবেই বা
ধ্বনিত হয় তা?
প্রকৃতপক্ষে গান্ধী রাজনীতিকে বৃত্তি হিসেবে দেখেননি।দেখেছিলেন আত্মিক উন্নতির
পরীক্ষাগার হিসেবে। যেখানে লক্ষ্য ও উপায় দুইই সমমূল্য। ন্যায়নিষ্ঠ নিখাদ প্রেমই
যেখানে যুগপৎ লক্ষ্য ও উপায়।বিশ্বাসকে পরীক্ষা ও প্রয়োগ করতে করতে চলা, ও মৌল আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার শিক্ষা,
গান্ধীর জীবন আমাদের সামনে তুলে ধরে। আদর্শের খোঁজ, সত্যানুসন্ধাণ, ও নীতিগত রাজনীতির চর্চার ক্ষেত্রেও,
গান্ধীর থেকেই আজকের সমকালীন রাজনৈতিক
অঙ্গণের আলোকিত হওয়া স্বাস্থ্যকর।
সম্প্রীতি ,একত্ব ,ও গণমুখী আত্মিক বিকাশের সেই পথে আজকের
ভারতবর্ষে দরকার প্রেরনার ও উদ্যমের।আদর্শের সেই ক্ষেত্রে 'বাপু'
আজও এক জীবন্ত সত্তা।সেই সজীব ভারতবর্ষকে প্রাণময় ও কল্যাণময় করে
তোলার ভবিষ্যৎ দায়ভার আমাদেরই, বর্তমান তরুণ ছাত্রযুব
সম্প্রদায়েরই।জন্মের সার্ধশতবর্ষে গান্ধীচর্চা ও অনুসন্ধান সেই দিক থেকেও, আত্মিক শপথের কাছে জরুরী ও বিশেষভাবে শক্তিশালী, আজও।
No comments:
Post a Comment